মহান আল্লাহ্ তা‘আলার দর্শন বা দীদারই হবে আখিরাতে মানুষের চরম ও পরম কাম্য। এটাই হবে বেহেশ্বাসীদের শ্রেষ্ঠতম পুরস্কার, জান্নাত অদৃষ্টপূর্ব ও অশ্রæতপূর্ব সুখ-সামগ্রীর ভান্ডার হলেও তার কোন কিছুই দীদারে ইলাহীর সমপরিমাণ দামী নয়।
জান্নাতীদের কেউই তা থেকে মাহরূম হবে না। প্রত্যেক জান্নাতবাসীই পূর্ণিমার চাঁদ দেখার ন্যায় পরিষ্কার ও সন্দেহাতীতভাবে করুনণাময় আল্লাহ্ তা‘আলাকে দেখতে পাবে। হয়তো প্রশ্ন উঠতে পারে যে, মানুষ সীমাবদ্ধ দৃষ্টিশক্তি দ্বারা যখন এ জগতে আল্লাহ্ তা‘আলাকে দেখতে পারে না, আখিরাতে সে কিরূপে দেখবে ? এরূপ কল্পনা একেবারেই ভিত্তিহীন। কারণ আল্লাহ্র ইচ্ছা ও দয়া ছাড়া মানুষ কিছুই করতে পারে না। অতএব, তাঁকে রহমত ও অনুগ্রহে যখন সে বেহেশ্তে স্থান পাওয়ার উপযোগী হবে, তখন তাঁরই দয়ায় তার দিব্যচক্ষু খুলে যাবে এবং সে নিঃসন্দেহে তাঁকে দেখতে পাবে। জান্নাতে দুনিয়ার মত ক্ষীপ্ত দৃষ্টিশক্তি থাকবে না।
১. যখন দিনের বেলা আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে না তখন তোমরা সূর্য দেখ কি? আর রাতের বেলা যখন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে, তখন তোমরা চাঁদ দেখ কি? নিশ্চয়ই তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে অতিসত্বর দেখতে পাবে। এমনকি তোমাদের কোন ব্যক্তিকে তার প্রতিপালক আহবান করবেন এবং জিজ্ঞাসা করবেন, “হে আমার বান্দা ! তুমি কি এ পাপ স্বীকার কর? সে বলবে হে আমার রব! আপনি কি আমাকে ক্ষমা করেননি?” তখন তিনি বলবেন,“আমার ক্ষমার দ্বারাই তুমি এ পর্যায়ে পৌছিয়েছ।” ইমাম আহমদ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
২. জান্নাতের অধীবাসীগণ যখন জান্ন্ােতর নিয়ামতসমূহ উপভোগরত থাকবে, তখন তাদের জন্য একটি আলো উজ্জ্বল হয়ে দেখা দিবে। সাথে সাথে তারা তাদের মাথা উঠাবে এবং অনুভব করবে যে, তাদের রব উপর থেকে তাদের উপর স্বীয় উপস্থিতির আলোকপাত করেছেন। অতঃপর তিনি বললেন,“তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক হে বেহেশ্বাসী।” এটা আল্লাহ্ তা‘আলার সেই বাণী (যা কোরআনে উল্লেখ আছে) সালামুন ক্বাওলামমির রব্বির রহিম অর্থাৎ, “শান্তি উক্তিটি দয়াময় রবের পক্ষ থেকে” (সূরা- ইয়াসীন ঃ আয়াত- ৫৮)। তিনি বেহেশ্তবাসীদের প্রতি তাকাবেন। তারাও তাঁর প্রতি তাকাবে। অতঃপর যতক্ষণ তারা তাঁকে দেখতে থাকাবে ততক্ষণ তাঁরা বেহেশতের কোন নিয়ামতের দিকেই লক্ষ্য করবে না। অতঃপর তিনি তাদের নিকট থেকে আত্মগোপন করবেন। শুধু তাঁর আলো ও তাঁর বরকত তাদের ওপর এবং তাদের বাসভবনসমূহের ওপর বাকী থাকবে। ইবনে মাজাহ আলোচ্য হাদীসখানা হযরত জাবির (রাঃ)- এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৩. বেহেশবাসীগণ যখন বেহেশতে প্রবেশ করবে, তখন আল্লাহ্ তা‘আলা বলবেন, “তোমরা কি চাও যে, আমি তোমাদেরকে আরও বেশি কিছু দান করি?” তারা বলবে, “আপনি কি আমাদের চেহারাগুলোকে উজ্জ্বল করে দেননি ? আপনি কি আমাদেরকে বেহেশ্তে প্রবেশ করাননি এবং দোযখ থেকে মুক্তি দেননি ?” তখন আল্লাহ্ তাঁর হিজাব (আলোর পর্দা ) খুলে দেবেন। অতঃপর তাদেরকে তাদের রবের দিকে দৃষ্টিপাত করার চেয়ে অধিকতর কোন প্রিয় বস্তু দেয়া হবে না। ইমাম তিরমিযী ও মুসলিম আলোচ্য হাদীসখানা হযরত সুহাইব (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৪. মহান আল্লাহ্ তা‘আলা হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উম্মতদের সন্তানদেরকে আরশের নীচে হাউযসমূহের প্রান্তে সমবেত করবেন। অতঃপর তিনি তাদের দিকে তাকিয়ে বলবেন, “এমন কি হয়েছে যে, আমি তোমাদেরকে মস্তকোত্তোলিত অবস্থায় দেখতেছি” অর্থাৎ উপরের দিকে চেয়ে থাকতে দেখতেছি ? তারা বলবে, “হে আমাদের রব! আমাদের পিতা-মাতাগণ পিপাসায় কাতর আর আমরা এ হাউযগুলোর প্রান্তে উপস্থিত আছি। তখন তিনি তাদের প্রতি ওহী প্রেরণ করে বলবেন, এ আধারগুলো পানিতে ভরে নাও, অতএব এই সারি থেকে বের হয়ে আস এবং তোমাদের পিতা-মাতাগণকে পান করাও।” দায়লামী আলোচ্য হাদীসখানা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা)ঃ -এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
৫. মহান আল্লাহ্ বলেছেন, “হে মূসা ! তুমি কখনো আমাকে দেখবে না। কোন জীবিত ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করা ছাড়া আমাকে দেখবে না। স্থলভাগের কোন অধিবাসী (আমাকে) দেখবে না, যতক্ষণ তাকে নীচে নিক্ষেপ করা না হয়। অর্থাৎ তার মৃত্যু হয়। জলভাগের কোন অধিবাসীও দেখবে না, যে পর্যন্ত না তাকে বিচ্ছিন্ন করা হয় (অর্থাৎ মৃত্যু হয়)। নিশ্চয়ই আমাকে বেহেশতবাসীগণ দেখবে যাদের চক্ষু দৃষ্টিহীন করা হবে না এবং যাদের দেহ জরাগ্রস্থ হবে না।
হাকীম ও তিরমিযী আলোচ্য হাদীসখানা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।
Leave a Reply